ক্যান্সার নিয়ে আমরা সবাই-ই কম বেশি জানি!
এটা বলতে একধরনের কিছু রোগ কে বুঝানো হয় যাকে মেডিকেলের ভাষায় আমরা বলি ম্যালিগন্যান্ট
নিওপ্লাসম! ম্যলিগন্যন্সি তখনই হয়,
যখন
কোষ বিভাজনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে সেটা বেশি আকারে হতে থাকে।
ক্যান্সার ! হলে অনেক ক্ষেত্রেই তা মৃত্যুর কারন
হয়ে দাঁড়ায়। একারনে
ক্যান্সার প্রতিরোধ একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলা যেতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে ক্যান্সারের প্রতিরোধ সম্ভব কি?
হ্যাঁ তবে সেটা ৩০ – ৪০% ক্ষেত্রে যদি নিয়ম মেনে সঠিক ভাবে জীবন
যাপন করা যায়।
কিভাবে সম্ভবঃ
১। ধূমপান থেকে বিরত থাকাঃ
ধূমপান থেকে বিরত থাকা বলতে একটিভ এবং প্যাসিভ, দুই ভাবেই বিরত থাকতে হবে। একটিভ ধুমপান বলতে, নিজে ধূমপান করা, আর প্যাসিভ ধুমপান বলতে অন্য ধূমপায়ীদের সাথে
থাকার কথা বলা হয়েছে।
প্রতি বছর তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি ব্যবহারর
জন্য ৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। অন্য
ভাবে বলতে গেলে প্রতি ৬ সেকেন্ডে মৃত্যু ঘটছে একজন মানুষের তামাক ব্যবহারের জন্য।
পৃথিবীতে যত ধরনের ক্যান্সার হয়, তার এক চতুর্থাংশের কারন ই হচ্ছে এই তামাক
জাতীয় দ্রব্য ধুমপান।
কি কি ক্যন্সার হয়ে থাকেঃ শুধুমাত্র ফুসফুসের
ক্যান্সারই নয়, এর সাথে, মুখ,
শ্বাসনালী, নাক,
সাইনাস, পাকস্থলী,
অগ্ন্যাশয়, জরায়ু,
কিডনী, লিভার এর ক্যান্সার হতে পারে!
কেন হয়ঃ ধুমপানের জন্য নানা ধরনের কারসিনোজেন
(এমন মলিকিউল যা কিনা কোষের জেনেটিক ম্যাপ পরিবর্তন করে ক্যন্সার সৃষ্টি করে) থাকে। তা ছাড়া,
নানা
ধরনের ফ্রী র্যাডিকেল (যেমন সুপার অক্সাইড) এর মাধ্যমেও এমনটা হতে পারে।
সুতরাং,
নিজের, নিজের পরিবারের এবং বন্ধু-বান্ধবদের জন্য নিজে
ধূমপান থেকে বিরত থাকুন এবং অন্যকে বিরত থাকতে বলুন!
২। অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকাঃ
ধূমপান যেমন শরীরে নানা ধরনের ক্যান্সারের
সৃষ্টি করে, ঠিক তেমন ভাবেই অ্যালকোহল
শরীরের নানা স্থানে ক্যান্সারের সৃষ্টি করে থাকে।
কি কি ক্যান্সার হয়ে থাকেঃ মুখ, লিভার,
ইসোফেগাস, ব্রেস্ট, ফ্যারিংস।
৩। বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশানঃ
বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশানও
ক্যান্সারের কারন হয়ে দাঁড়ায়। তাদের
অনেক ইনফেকশান যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা হয়,
তবে
ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশান – হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ব্যাক্টেরিয়ার ইনফেকশানের
জন্য পাকস্থলিতে ক্যান্সার হতে পারে।
ভাইরাল ইনফেকশান – হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, এপস্টিন-বার ভাইরাস, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, ক্যাপোসি সারকোমা হার্পিস ভাইরাসের জন্য ক্যান্সার
হতে পারে।
কি করনীয় – যে কোনো ধরনের ইনফেকশানের
জন্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে এবং রেগুলার ফলো আপ-এ থাকতে
হবে!
৪। অতি বেগুনী(আল্ট্রা ভায়োলেট) রশ্মি থেকে দূরে
থাকাঃ
আল্ট্রা ভায়োলেট রে সূর্যের আলোতে বিদ্যমান, এই রশ্মির কারনে তা ত্বকের কোষের নিউক্লিয়াস-এ
পরিবর্তন পরিবর্তন ঘটিয়ে ত্বক-এ ক্যান্সার তথা স্কিন ক্যান্সার করে থাকে। অবশ্য এই ক্যান্সার আমাদের তুলনায় ককেশিয়ান
তথা সাদা চামড়ার লোকেদের ভেতর বেশি দেখা যায়। তার পরও সূর্যের আলোর প্রখরতা বেশি হলে সরাসরি
সেই আলো তে না থাকাটাই উত্তম।
৫। পরিমিত এবং সুষম খাদ্য গ্রহনঃ
আমাদের খাদ্য তালিকার ভেতর অনেক খাবারই এন্টি
ক্যান্সারাস উপাদান বহন করে (যেমন টমেটো),
তাই
পরিমিত এবং সুষম খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব!
৬। নিয়িমিত ব্যয়ামঃ
নিয়মিত ব্যয়াম করার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ
সম্ভব। ব্যাপারটা
শুনতে কিছুটা অদ্ভুতও বটে, ব্যয়াম কিনা করবে ক্যান্সার
প্রতিরোধ! হ্যাঁ, কেননা মিয়মিত শরীর চর্চার
মাধ্যমে আমাদের ইমিউনিটির কোষ সতেজ থাকে আর এই কোষ গুলোই আমাদের শরীরে কোনো ক্যান্সার
কোষ সৃষ্টি হলে তা ধ্বংস করে থাকে!
৭। মধ্য বয়সের পর থেকে নিয়মিত চিকিৎসকের ফলো-আপ-এ
থাকাঃ
অনেক সময় ক্যান্সার সৃষ্টি হলে তা যদি দ্রুত
ডায়াগনোসিস করা যায়, তাহলে সেটা চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ
ভাবে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। তাই
মধ্যবয়সের পর থেকে নিয়মিত চিকিৎসকের ফলো-আপ-এ থাকা উচিত।
ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্পূর্ন ভাবে সম্ভব না
হলেও, সঠিক ভাবে জীবনযাপন করে এবং সচেতন থাকার মাধ্যমে
৩০-৪০% ক্ষেত্রে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব!
আপনাদের সুখী জীবনই আমাদের কাম্য।
0 comments:
Post a Comment