Tuesday, March 18, 2014

সাধারণ উপাদানে ত্বকের পি এইচ পুনরদ্ধার!

প্রথমে আমাদের জানা দরকার ত্বকের পি এইচ কী? 

পি এইচ বা পটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন হল কোন একটি পদার্থের এসিডিক বা এলকালীর পরিমাপ। ০-১৪ পর্যন্ত মাপের স্কেল দ্বারা এটি পরিমাপ করা হয়। মানুষের ত্বকে সেবামের পি এইচ সাধারণত ৪.৫ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত থাকে। যা স্কেল অনুযায়ী এসিডিক। 



এই ন্যাচারাল স্কিন এসিডিটি ত্বককে ফাঙ্গাস আর ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে আর আমাদের ত্বক রাখে স্বাস্থ্যজ্জ্বল। কিছু কিছু স্কিন প্রোডাক্ট এই ন্যাচারাল পি এইচ ব্যাহত করে। আমাদের ত্বক স্বাভাবিক ভাবেই সংক্রমণ এবং পরিবেশগত চাপ সহ্য করার ক্ষমতার অধিকারী কিন্তু আন ব্যালেন্সড pH এর মাত্রা দ্বারা এসব কর্মকাণ্ড প্রভাবিত হয়। 

আমাদের ত্বকের পৃষ্ঠতলে একটি পাতলা, প্রতিরক্ষামূলক স্তর আছে, যাকে এসিড ম্যাণ্টেল বলা হয়। এই এসিড ম্যাণ্টেল সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে নির্গত সেবাম (ফ্রি ফ্যাটি এসিড) দ্বারা গঠিত হয়। এটি আবার ঘামের ল্যাকটিক এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের সাথে মিশ্রিত হয়ে ত্বকের জন্য pH তৈরী করে। 

আপনার ত্বক ওয়াটার প্রুফ থাকার জন্য এবং সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল প্রয়োজন। এই তেল আমদের শরীরেই উৎপন্ন হয়। তেলের পরিমাণ খুব সামান্য হলে ত্বক শুষ্ক এবং অকালে রিংকেল দেখা দিতে পারে। আবার খুব বেশি পরিমাণ তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হতে পারে। বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ কারণে ত্বকের পি এইচ ভারসাম্যহীন হয়ে যেতে পারে। 

আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বক আম্লিক হয়ে যায় আবার আমাদের জীবনধারা এবং আমাদের পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার (ধূমপান, বায়ু, জল, সূর্য, দূষণ) সংস্পর্শে ত্বক নিজেকে রক্ষার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এখন চলুন দেখা যাক কিছু ফেস মাস্কের বদৌলতে ত্বকের পি ইচ কীভাবে পুনরদ্ধার করবেন।

টমেটো মাস্কঃ
১টি টমেটোর পাল্প, ১ প্যাকেট জেলাটিন, ১ টেবিল চামচ কমলার রস। এই উপাদান গুলোকে গরম করুন তারপর মসৃণ একটি পেস্ট বানিয়ে নিন। এই পেস্ট মুখে অ্যাপ্লাই করে শুকানোর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টমেটো ত্বকের প্রাকৃতিক পি এইচ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং ব্লেমিশের জন্য চমৎকার প্রাকৃতিক প্রতিকারক। উপরন্তু জেলাটিন মুখের ত্বক দৃঢ় করতে সাহায্য করে এবং কমলার রস ত্বককে এক্সফলিয়েট করে।

টক দইয়ের মাস্কঃ 

১ টেবিল চামচ পাকা কলার পেস্ট এবং ১ টেবিল চামচ টক দই নিন। এটি ভালো ভাবে মিশিয়ে মুখে অ্যাপ্লাই করুন। এই দুটি উপাদানই ত্বকের জন্য একদম জাদুর মত কাজ করে। কলাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ, পটাসিয়াম এবং খনিজ পদার্থ একটি সুস্থ ত্বক সুনিশ্চিত করে। আবার দইয়ে আছে আলফা হাইড্রক্সি এসিড, এটি ত্বকের pH এর ভারসাম্য পুনঃস্থাপনে সাহায্য করে।

লেমন মাস্কঃ 

আধা কাপ লেবুর খোসা এবং লেবুর পাতা পানিতে ৫ মিনিট সেদ্ধ করে নিন। এর সাথে ওটস মিশিয়ে পানিটি ছেঁকে ঠাণ্ডা করতে রাখুন। আরেকটি বাটিতে বেসন, লেবুর রস, ছেঁকে রাখা পানিটি মিশিয়ে একটি ফেস মাস্ক বানিয়ে ফেলুন। মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

লেবুর খোসা রোদে শুকিয়ে নিন তারপর গুঁড়ো করুন। এবার এই চূর্ণ দিয়ে ত্বক উপযোগী ফেস মাস্ক তৈরী করা হবে। আপনার যদি তৈলাক্ত ত্বক হয়ে থাকে তবে আধা চা চামচ কমলার খোসা চূর্ণের সাথে ১ চা চামচ লেবুর খোসা চূর্ণ, বেসন, লেবুর রস এবং টক দই মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। প্রথমে মাস্কটি দিয়ে মুখ হালকা ম্যাসেজ করবেন তারপর শুকানোর জন্য ১৫ মিনিট অপেক্ষা করবেন। এসময় কারও সাথে কথা বলবেন না। তারপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলবেন।

এসব মাস্ক ছাড়াও আরও কিছু খাদ্য আছে যা আপনার ত্বকের পি এইচ সমতা রক্ষা করতে সাহায্য করে এমনকি এসব খাদ্য আপনার ত্বককে ক্লিনও করে।

পানিঃ 

পানিতে ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্য আছে আর যখন কোন কিছু ক্ষারীয় হয়, তখন এটি আপনার শরীরে্র বাড়তি অ্যাসিড প্রতিরোধ করে। এসিডের উপস্থিতি ব্যক্তির pH এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান আপনার pH এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

লেবুঃ 

লেবু আম্লিক কিন্তু এটি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে ক্ষারীয় আকার ধারণ করে। শুধু লেবু নয় সব ধরণের সাইট্রাস জাতীয় ফল আপনার pH এর মাত্রা কম করতে সাহায্য করবে।

কাজুবাদামঃ
 

কাঁচা কাজুবাদাম আপনার ত্বকের pH এর সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তবে একটি অঙ্কুরিত কাজুবাদামে পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি পরিমাণে থাকে এবং আপনার ত্বক এর pH এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারঃ 

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার পুরো দেহের Ph এর সমতা রক্ষা করতে সহায়তা করে। যার শরীরে Ph এর মাত্রা কম সে খুব তাড়াতাড়ি যে কোনো রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং দেহে শক্তি অনেক কম থাকে। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার প্রতিদিন খেলে দেহে শক্তি সঞ্চয় হয়।

রসুনঃ 

রসুন বিভিন্ন রোগের জন্য মহৌষধ স্বরূপ এবং ত্বকে pH এর ভারসাম্য বজায় রাখতে এর অবদান অনস্বীকার্য। আপনি প্রতিদিন রসুন এবং একটি কাঁচা লবঙ্গ খেলে আপনার ত্বক এবং চেহারা স্বাস্থ্যজ্জ্বল হতে বাধ্য।

শাক-সবজিঃ 

দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস ত্বকের পি এইচ রক্ষা করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক খাবারই আছে যা আমাদের শরীরে প্রবেশের পূর্বে এসিডিক থাকে কিন্তু হজমের পর পরই তা আ্যালকালাইনে পরিণত হয়। একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ Jeannette Graf এর মতে আমাদের আম্লিকের থেকে ক্ষারীয় খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন, নতুবা অভ্যন্তরীণ ভাবে আমরা অনেক বেশি আম্লিক হয়ে পড়বো। তার মানে আমাদের প্রচুর পরিমাণে এল্কালাইজিং খাদ্য যেমন সবুজ শাক-সবজি, লেবু , টমেটো, গাজর, সয়াবিন গ্রহণ করতে হবে।

[আপনাদের সুখী জীবনই আমাদের কাম্য।]

0 comments:

Post a Comment