সর্পদংশন বা সাপে কাটা একটি অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা৷ দংশিত ব্যক্তি
এরকম পরিস্থিতির জন্য মোটেই প্রস্তুত থাকেন না৷ বাংলাদেশের গ্রামগুলোয় সর্পদংশন প্রায়ই
সাপে কাটার ঘটনা ঘটে থাকে৷ বেশিরভাগ জনসাধারণের সাপ সম্পর্কে অযথা ভীতি রয়েছে৷
দংশনকারী সাপ বিষধর হলে মারাত্মক প্রতিক্রয়া হতে পারে৷ সর্পদংশনে মানুষের মৃতু্য
হার অনেক৷
বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সাপসমূহঃ
বাংলাদেশে মাত্র ৬ প্রজাতির বিষধর সাপ আছে-
✬ কোবরা (গোখরা)
✬ কেউটে (ক্রেইট)
✬ চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার)
✬ সামুদ্রিক সাপ (সি স্নেক)
✬ রাজ গোখরা (কিং কোবরা)
লক্ষণঃ
✬ দংশিত স্থানে ব্যথা নাও থাকতে
পারে তবে ক্ষতস্থান ফুলে গেলে কিংবা পঁচে গেলে ব্যথা হতে পারে৷
✬ রোগীর ঘুমঘুম ভাব হতে পারে ও
দুর্বলতা অনুভব করতে পারে৷
✬ প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত দেখা
দিতে পারে৷ চোখের মাংসপেশী ও অক্ষিগোলকের মাংসপেশীতে প্যারালাইসিস হলে রোগীর চোখের
পাতা ভারী হয়ে যায়, চোখ বুঁজে আসে, চোখে ঝাপসা দেখে৷
✬ জিহ্বা জড়িয়ে আসা, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া, চোয়াল ও তালু অবশ
হওয়ার কারণে ঢোক গিলতে অসুবিধা, হাঁটতে অসুবিধা হওয়া,
হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া এমন কি মাংসপেশীও অবশ হতে পারে৷
শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হয়ে রোগী নীল বর্ণ হয়ে যেতে পারে৷
প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
✬ রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে ৷
বেশিরভাগ রোগী মনে করেন মৃতু্য অবশ্যম্ভাবী৷ তাই জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে সাহস দেয়া
ও প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে যথাযথ স্থানে/হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য প্রেরণ করলে
রোগী বিশ্বাস ও সাহস ফিরে পাবে৷
✬ দংশিত স্থান কিছুতেই কাটা উচিত
নয়৷ কেবল ভিজে কাপড় দিয়ে কিংবা জীবাণুনাশক লোশন দিয়ে ক্ষতস্থান মুছে দিতে হবে৷
✬ দংশনকৃত স্থান থেকে ভিতরের দিকে
সাথে সাথে কেবল একটি গিঁট গামছা বা কাপড় দিয়ে (পায়ে দংশন করলে রানে, হাতে দংশন করলে কনুইয়ের উপরে গিঁট) এমনভাবে দিতে হবে যেন খুব আটসঁাট বা
ঢিলে কোনটাই না হয় (বলা হয় যেন একটি আঙুল একটু চেষ্টায় ভেতরে যেতে পারে)৷
✬ সাপে কাটার স্থান বেশি নড়াচড়া
করা যাবে না কারণ মাংসপেশী সংকোচন করলে বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে৷
✬ রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ
করতে হবে কোনোক্রমেই রোগীকে হঁাটতে দেওয়া যাবে না৷ রোগীকে কঁাধে, খাটিয়ায় বা দোলনায় করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে৷ (সম্ভব হলে মৃত সাপ এর
প্রজাতি ও বিষধর কিনা তা নিরূপণের জন্য সংগে নিতে হবে৷ সাবধান! সাপ মৃত কিনা
ঠিকভাবে দেখে নিন৷ কারণ সাপ মারা যাওয়ার ভান করতে পারে এবং পরে আবার সাপ-দংশন করতে
পারে৷)
✬ জরুরি কোনো উপসর্গ না থাকলে বিষদাতের
চিহ্ন পরীক্ষার
জন্য দংশিত স্থান পরীক্ষা করতে হবে৷ বিষ দাঁতের দাগ প্রায় আধা ইঞ্চি ফাকে দুটি
খোচা দেয়ার চিহ্ন হিসাবে অথবা কেবল আচড়ের দাগ হিসেবে দেখা যেতে পারে৷ দুটো বিষদাঁতের
চিহ্ন পরিষ্কারভাবে থাকলে খুব সম্ভবত সাপটি বিষধর, তবু
বিষদাঁতের চিহ্ন না থাকলে যে সাপটি বিষধর নয় তা বলা যাবে না৷
✬ কামড়ানোর স্থানে চামড়ার রঙের পরিবর্তন, কালচে
হওয়া, ফুলে যাওয়া, ফোসকা পড়া,
পচন ধরা ইত্যাদি হতে পারে- আবার কোনো পরিবর্তন নাও থাকতে পারে৷
আবার প্রাথমিক চিকিত্সার ফলেও স্থানীয় পরিবর্তন হতে পারে৷
কুসংস্কারঃ
আমাদের দেশে অনেক ক্ষতিকর প্রাথমিক চিকিত্সা প্রচলিত যা ওঝা ও সর্প-চিকিৎসকরা প্রদান করে থাকেন৷ যা থেকে অনেক সময় রক্তপাত, ধনুষ্টংকার ও পঁচনসহ অন্যান্য অসুবিধা হয়৷
কুসংস্কারঃ
আমাদের দেশে অনেক ক্ষতিকর প্রাথমিক চিকিত্সা প্রচলিত যা ওঝা ও সর্প-চিকিৎসকরা প্রদান করে থাকেন৷ যা থেকে অনেক সময় রক্তপাত, ধনুষ্টংকার ও পঁচনসহ অন্যান্য অসুবিধা হয়৷
✬ দংশিত অঙ্গ ধারালো ছুরি দিয়ে
কেটে রক্তক্ষরণ করানো৷
✬ একাধিক স্থানে খুব শক্ত করে গিঁট
দেয়া৷
✬ কার্বলিক এসিড জাতীয় রাসায়নিক
পদার্থ দিয়ে দংশিত জায়গা পোড়ানো
✬ গাছ-গাছড়ার রস দিয়ে প্রলেপ দেয়া৷
✬ বমি করানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির
ব্যবহার৷
✬ কানের ভেতর বা চোখের ভেতর কিছু
ঢেলে দেয়৷
এসব কখনও করা উচিত নয় বরং হাসপাতালে বা ডাক্তারের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে৷
সর্পদংশন প্রতিরোধঃ
এসব কখনও করা উচিত নয় বরং হাসপাতালে বা ডাক্তারের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে৷
সর্পদংশন প্রতিরোধঃ
✬ বেশিরভাগ সর্পদংশন পায়ে হয়ে
থাকে৷ কাজেই সাপ থাকতে পারে এমন জায়গায় হাটার সময় বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে
জুতা, লাইট ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে হবে৷
✬ সাপ সামনে পড়ে গেলে ধীর-স্থির
হয়ে দাড়িয়ে থাকা উচিত্, সাপ প্ররোচনা ছাড়া দংশন করে না৷
(শুধু সাপ নয় পৃথিবীতে কোনো প্রাণীই অনর্থক ক্ষতি করে না)
✬ দুর্ভাগ্যবশত যদি সাপ দংশন করে
থাকে, শান্ত থেকে কারো সাহায্য নিতে হবে৷ সর্পদংশনের পর
কখনো দৌড়ানো উচিত্ নয়, এতে বিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
[আপনাদের সুখী জীবন আমাদের কাম্য। ধন্যবাদ।]
0 comments:
Post a Comment