Thursday, February 20, 2014

মধুর যাদু !

মধুকে সর্বরোগের প্রতিষেধক বলা হয়। তবে মধুর নিরাময় শক্তিও রয়েছে। 

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, 
‘‘...তার (মৌমাছি) থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার (নাহল-৬৯)।’’ 


মধু যেমন বলকারক খাদ্য এবং রসনার জন্য আনন্দ ও তৃপ্তিদায়ক, তেমনি রোগ-ব্যাধির জন্যও ফলদায়ক ব্যবস্থাপত্র। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মধু খুবই ভালবাসতেন। একবার এক ব্যক্তি মহানবীর (সাঃ) কাছে এসে বলল, আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। 

রাসূল (সাঃ) বললেন, তাকে মধু পান করাও। সে ব্যক্তি পুনরায় আসলে রাসুল (সাঃ) আবারও বললেন, তাকে মধু পান করাও। সে ব্যক্তি তৃতীয়বার আসলে রাসূল (সাঃ) একই কথা বললেন, তাকে মধু পান করাও। লোকটি পুনরায় এসে বলল, আমি তাকে মধু পান করিয়েছি। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, আল্লাহ সত্য বলেছেন এবং তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলেছে। তাকে মধু পান করাও। অতঃপর তাকে মধু পান করালে সে সুস্থ হল (সহীহ বোখারী)। 

মধু রোগ প্রতিষেধক। কারণ এর রয়েছে জীবাণু বিরোধী গুণাবলী। মধুতে চিনির পরিমাণ শতকরা ৮২.৪ ভাগ। অর্থাৎ মধুতে চিনির পরিমাণ অত্যধিক বলে সাধারণ কোন প্রকার রোগ-জীবাণু জন্মাতে পারে না। তাছাড়া মধুর অম্লতাও জীবাণু বিরোধী কাজের জন্য দায়ী। 

এক গবেষণায় (২০০৫) জানা যায়, ডায়রিয়ার জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে মধু দারুণ কার্যকর। আরেক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় জানা যায়, মধু টাইফয়েড জ্বরের জীবাণুর বিরুদ্ধেও খুব কার্যকর। 

মধুর বিভিন্ন ধরনের কার্যকরী ক্ষমতা বিদ্যমান। মানসিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিরা দৈনিক দু'বার এক চামচ করে মধু পান করলে তাদের মানসিক শক্তির উন্নতি হয়ে থাকে। 

এছাড়া পুদিনা পাতা সিদ্ধ করে সেই পানিতে সামান্য মধু মিশিয়ে নিয়মিত পান করলে মানসিক শক্তি ও উদ্যম বৃদ্ধি পায়। যারা অনিদ্রায় ভোগেন তাদের জন্য মধু অত্যন্ত উপকারী। এক গ্লাস দুধের মধ্যে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে ভাল ঘুম হয়। এছাড়া দুধ-মধুর মিশ্রণ মস্তিষ্কের দুর্বলতা কমিয়ে দেয়। 

সর্দি-কাশিতে মধুর উপকারিতা প্রমাণিত। ছোট দু'চামচ মধু অর্ধেক লেবুর রসের সাথে দৈনিক তিন-চার বার সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়। যদি গলা ব্যথা থাকে তাহলে দিনে ৩ বার ১ চামচ করে মধু খেতে হবে। মধুর তৈরি চা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এ জন্য এক কাপ গরম পানিতে পরিমাণমত মধু মিশিয়ে চায়ের মত করে পান করতে হয়। 

মধু হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত ১ চা চামচ মধু সেবনে হৃদপিন্ড শক্তিশালী থাকে। 

ডায়াবেটিকসের চিকিৎসায় মধু একটি অতুলনীয় ওষুধ। চিনি এবং অন্যান্য মিষ্টি দ্রব্য পরিত্যাগ করে নিয়মিত অন্তত ১ চা চামচ মধু সেবন করা যায়। 

প্রতিদিন সকালে ও রাতে ১ চা চামচ মধুর সাথে ছোট ১ চামচ চারুচিনি গুড়া গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে দীর্ঘদিনের আর্থ্রাইটিস রোগে উপকার পাওয়া যায়। ক্যান্সারের মত মারাত্মক রোগেও দিনে তিনবার ১ চা চামচ মধুর সাথে ১ চা চামচ দারুচিনি গুড়া ১ মাস খেলে ক্যান্সার রোগীরা উপশম পেতে পারেন। 

মুত্রথলির সংক্রমণে এক চা চামচ মধুর সাথে এক চামচ দারুচিনির গুড়া এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ৩ বার পান করলে উপকার পাওয়া যায়। 

যারা ব্রন সমস্যায় রয়েছেন, তারা চন্দন বাটার সাথে পরিমাণমত মধু মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। চুলের খুশকির সমস্যায় লেবুর রসে মধু মিশ্রিত করে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করতে হবে। এভাবে ২০-৩০ মিনিট ম্যাসাজ করার পর শ্যাম্পু দ্বারা চুল পরিষ্কার করতে হবে। ৫-৭ দিন নিয়মিত এ ম্যাসাজ করলে খুশকি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

এছাড়াও ...

=> হাজারো গুণে ভরা মধুতে গুকোজ ও ফ্রুকটোজ আছে যা শরীরে শক্তি যোগায়। এর অন্যান্য উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

=> প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেলে ঠান্ডা লাগা, কফ, কাশি ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়।

=> মন ভালো করতে প্রতিদিন হালকা গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খান। সঙ্গে একটু দারুচিনির গুঁড়াও ছিটিয়ে নিতে পারেন।

=> প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে ওজন কমে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। এছাড়াও এভাবে প্রতিদিন খেলে লিভার পরিষ্কার থাকে, শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বের হয়ে যায় এবং শরীরের মেদ গলে বের হয়ে যায়।

=> মধুর সাথে দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে তা রক্তনালীর সমস্যা দূর করে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।

=> মধু ও দারুচিনির মিশ্রণ নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমে এবং যারা ইতিমধ্যেই একবার হার্ট অ্যাটাক করেছেন তাদের দ্বিতীয়বার অ্যাটাকের ঝুকি কমে যায়।

=> হজমের সমস্যা থাকলে প্রতিদিন সকালে মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রতিবার ভারী খাবারের আগে এক চামচ মধু খেয়ে নিন। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খান।

=> যারা সারাক্ষন দূর্বলতায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেয়ে নিন এবং সারা দিন সবল থাকুন।

=> সকালে ত্বকে মধু লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে মধুর বেশ কিছু উপাদান ত্বক শুষে নেয়। ফলে ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হয়।

=> ত্বকে নিয়মিত মধু ব্যবহার করলে ত্বকের দাগও চলে যায়।

[আপনাদের সুখী জীবনই আমাদের কাম্য।]

0 comments:

Post a Comment