ফরমালিন আসলে কি। যদি এই
ফরমালিন সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা আমাদের থাকতো তাহলে হয়তো আমরা এরকম মারাত্মক
ক্ষতিকর দ্রব্য হয়তো ব্যবহার থেকে বিরত থাকতাম।
কি এই
ফরমালিনঃ
মিথ্যানলের ৪০ ভাগ জলীয় দ্রবণকে ফরমালিন বলা হয়। ফরমালডিহাইড দেখতে সাদা পাউডারের মতো। পানিতে সহজেই দ্রবণীয়। শতকরা ৩০-৪০
ভাগ ফরমালডিহাইডের জলীয় দ্রবণকে ফরমালিন বলা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফরমালিন অতি বিপজ্জনক। ফরমালিনের বোতলে অতি বিপজ্জনক ছবি ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা
হয়েছে। বৈজ্ঞানিক ভাবে মানুষের জন্য ফরমালিনের
লিথাল ডোজ ৩০ মি.মি. এবং বাতাসে ২পিপিএম-এর নিচের মাত্রাকে গ্রহণযোগ্য ধরা হয়।
ফরমালিন
কি কাজে ব্যবহার হয়ঃ
আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে (বাংলাদেশ, চীন, ইন্দোনেশিয়া,
ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়া ইত্যাদি) ফরমালিনের মূল
ব্যবহারের পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে বর্তমানে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিভাবে
বুঝবেন খাদ্যে ফরমালিন দেয়া হয়েছেঃ
ফলঃ
ফরমালিন দেয়া ফল শনাক্ত করা বেশ কষ্টসাধ্য। কারণ অনেক ফলেই ফরমালিন থাকে।
মাছঃ
ফরমালিন দেয়া মাছ ও মাছের আঁশ শক্ত, মাছের কান উল্টালে ভেতরে লাল দেখা যায়, মাছে গন্ধ থাকে না বললেই চলে এবং
সাধারণত খুব কম মাছি ফরমালিন দেয়া মাছে বসে (দীর্ঘদিন মাছ বাজারের মাছি ফরমালিনে
কিছুটা অভ্যস্ত হলে ফরমালিন দেয়া মাছ বাড়িতে আনলে সহজে মাছি ওই মাছে বসবে না)। ফরমালিন দেয়া শুঁটকি মাছ রান্না করার পরেও শক্ত ভাবটা যায় না।
মাছ থেকে
ফরমালিন দূর করবেন কিভাবেঃ
✬ পরীক্ষায়
দেখা গেছে পানিতে প্রায় ১ ঘণ্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ফরমালিনের মাত্রা শতকরা ৬১ ভাগ
কমে যায়।
✬ লবণাক্ত
পানিতে ফরমালিন দেয়া মাছ ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ফরমালিনের
মাত্রা কমে যায়।
✬ প্রথমে
চাল ধোয়া পানিতে ও পরে সাধারণ পানিতে ফরমালিন যুক্ত মাছ ধুলে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ
ফরমালিন দূর হয়।
✬ সবচেয়ে
ভালো পদ্ধতি হল ভিনেগার ও পানির মিশ্রণে (পানিতে ১০ ভাগ আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট
মাছ ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ ফরমালিনই দূর হয়।
এ ছাড়া ফরমালিন শনাক্তকরণের রাসায়নিক দ্রব্যও আজকাল বাজারে
পাওয়া যায় সুলভমূল্যে।
ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও মিথানল থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লিভার বা যকৃতে মিথানল এনজাইমের উপস্থিতিতে প্রথমে ফরমালডিহাইড
এবং পরে ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। দুটোই
শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ফরমালিনের
ক্ষতিকর দিক এটা দু’ভাবে
ক্ষতি করতে পারেঃ
১। তাৎক্ষণিক
বা একবার ব্যবহারের ফলেঃ-
✬ সাধারণত চর্ম, চোখ, মুখ, খাদ্যনালি ও পরিপাকতন্ত্র শ্বাসনালি
জ্বালাপোড়া করবে।
✬ চোখে পানি পড়া, কর্নিয়া অকেজো হওয়া, দৃষ্টিশক্তি পরিবর্তন হওয়া এমনকি অন্ধও হয়ে যেতে পারে।
✬ দুর্বলতা ও মাথাব্যথা।
✬ কফ ও কাশি,
শ্বাসনালি
সংকোচন, শ্বাসনালির
অবনয়ন, শ্বাসতন্ত্রে
পানি জমা, শ্বাস-প্রশ্বাসে
বাধা গ্রস্ত হওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হওয়া, কখনও কখনও মৃত্যু হতে পারে, শ্বাসতন্ত্রে পানি জমে বা শ্বাসতন্ত্র অকেজো হয়।
✬ বমি বমি ভাব,
বমি
করা, রক্তবমি
হওয়া, বুক ও
পেটে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া করা,
কালো
পায়খানা, পেটে
গ্যাস হওয়া, পাকস্থলীতে
ক্ষত রোগ হওয়া, পেটে পীড়া
হওয়া, বিপাকজনিত
অম্লাধিক হতে পারে।
✬ লাল প্রস্রাব হতে পারে, তাৎক্ষণিক কিডনি অকেজো হতে পারে।
✬ স্পর্শকাতর রোগ, চর্ম রোগ,
চর্মেও
বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন হতে পারে।
✬ খিঁচুনি,
কেন্দ্রীয়
স্নায়ুতন্ত্রে অবনয়ন, অজ্ঞান
হতে পারে।
২। দীর্ঘমেয়াদি
বা বার বার গ্রহণের ফলেঃ-
✬ ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস
করে। ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
✬ তাৎক্ষণিক ভাবে ফরমালিন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কারবাইড সহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে
পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট,
বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার, চর্মরোগ
সহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে।
✬ ধীরে ধীরে এসব রাসায়নিক পদার্থ লিভার, কিডনি, হার্ট, ব্রেন সব
কিছুকে ধ্বংস করে দেয়। লিভার ও
কিডনি অকেজো হয়ে যায়। হার্টকে
দুর্বল করে দেয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
✬ ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে
পারে। অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে
রক্তশূন্যতাসহ অন্যান্য রক্তের রোগ,
এমনকি
ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে। এতে
মৃত্যু অনিবার্য।
মানবদেহে ফরমালিন ফরমালডিহাইড ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়ে
রক্তের এসিডিটি বাড়ায় আমাদের দেশে ফরমালিন অপব্যবহার বাড়ছে দিন দিন।
আর তা প্রতিরোধ করতে জনসচেতনতা বাড়ানো, অপব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য এবং তার
প্রতিকারের ব্যবস্থার আইনসহ বিভিন্ন প্রচার কাজ বাড়ানো সরকার ও জনগণের সহযোগিতা
প্রয়োজন।
আপনাদের সুখী জীবন আমাদের কাম্য। ধন্যবাদ।
আমাদের সুখী জীবন আপনাদের কাম্য। ধন্যবাদ।
ReplyDelete