সাধারনত রোজা আসলেই ডায়াবেটিসে আক্রন্ত রোগীরা
চিন্তায় পড়ে যান, রোজা রাখবেন কি রাখবেন
না?
ডায়াবেটিসের রোগীরা আজ থেকে সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে কিছু
নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলবেন। পবিত্র রমজানে স্বাভাবিক ভাবেই পরির্বতন হবে ওষুধ বা ইনসুলিন
নেয়ার মাত্রা ও সময়সূচি। এ সময় আপনার শরীরের ক্যালরি এবং ওষুধের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা
দেখা দিতে পারে। সেজন্য
আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে আবার কমে যেতে পারে।
তাই রমজান মাসে রোজা রাখার
জন্য ডায়াবেটিসের রোগীদের দরকার পূর্ব-প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ। রমজান মাসে খাদ্য গ্রহণ, ব্যায়াম
ও ওষুধের পরিবর্তন বিষয়ে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন ও আমেরিকান ডায়াবেটিস
অ্যাসোসিয়েশনের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে একজন
রোগী তাঁর রক্তে শর্করার পরিমাণ ও ডায়াবেটিস জনিত জটিলতা ইত্যাদি বিবেচনা করে নতুন
নিয়মসূচির জন্য আগে থেকেই পরামর্শ করে নেবেন।
রমজানে প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক নর-নারীর জন্য
রোজা রাখা ফরজ। প্রায় ৮০% টাইপ-২, ডায়াবেটিস রোগী এবং ৪০% টাইপ-১ ডায়াবেটিস
রোগী রমজান রোজা রাখে।
রমজান-চন্দ্রমাস হওয়াতে ২৯ বা ৩০ দিনে হয়। ভৌগোলিক অবস্থান
এবং ঋতু ভেদে কমে বেশি প্রায় ১৬ ঘন্টা রোজা রাখতে হয়।
রোজা রাখলে শরীরে কি হয়?
খাবার খেলে অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। যা লিভার এবং মাংসপেশীতে
গস্নুকোজকে গস্নাইকোজেন হিসেবে জমা করে। রোজার সময় রক্তের গস্নুকোজের মাত্রা কমতে থাকে। যার কারণে ইনসুলিন
নিঃসরণ কমে যায়। একই সময়ে গস্নুকাগন এবং কেটে-কোলামিন বেড়ে যায় যা গস্নুকোনিউজনিসের
মাধ্যমে এবং গস্নাইকোজেন ভেঙ্গে গস্নুকোজের চাহিদা মিটায়। দীর্ঘ সময় খালি পেটে
থাকলে গস্নাইকোজেন শেষ হয়ে যায় আর ইনসুলিনের মাত্রা কম থাকার কারণে এডিপোসাইট থেকে
ফ্যাটি এসিড নিঃসরণ বেড়ে যায়। মাংশপেশী,
হ্নদপিন্ড,
লিভার,
কিডনি এবং এডিপোস টিসু ফ্লাটি এসিডকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার
করে সাথে কিটোন তৈরি করে।
টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে হাইপোগস্নাইইসেমিয়া
প্রতিরোধে গস্নুকাগন নিঃসরণ চাহিদামত হয় না। ইনসুলিনের খুব বেশি
ঘাটিত থাকলে সাথে দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকলে গস্নাইকোজেন বেশি পরিমাণে ভাঙ্গে। গস্নুকোনিউজেনেসিস
এবং কিটোজেনেসিস বেড়ে যায়। যার কারণে হাইপার গস্নাইসিমিয়া এবং কিটো এসিডোসিস হয়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রেও দীর্ঘ
সময় খালি পেটে থাকলে একই ধরনের সমস্যা হতে পারে।
রোজার কারণে ডায়াবেটিক রোগীর যে ধরনের সমস্যা
হতে পারে-
১। হাইপো গস্নাইসেমিয়া
২। হাইপার গস্নাইসেমিয়া
৩। ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস
৪। পানি শূন্যতা এবং থ্রম্বসিস।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে রমজান মাসে ডায়াবেটিক
রোগীর হাইপো গস্নাইসোমিয়ার মাত্রা টাইপ-১ রোগীর ক্ষেত্রে ৪.৭ গুণটাইপ-২ রোগীর
ক্ষেত্রে ৭.৫ গুণ বেড়ে যায়। আর হাইপার গস্নাইসেমিয়া টাইপ-২ রোগীর ক্ষেত্রে ৫ গুণ এবং টাইপ-১
রোগীর ক্ষেত্রে ৩ গুণ বেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকাই পানিশূন্যতার মূল
কারণ। গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়া এবং কঠোর পরিশ্রম সাথে হাইপোরগস্নাইসেমিয়ায়
অতিরিক্ত প্রশ্রাবের কারণে পানি শূন্যতা এবং ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ কমে যেতে পারে। বস্নাড পেশার কমে গিয়ে
অজ্ঞান হওয়া, পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া, হাড় ভেঙ্গে যাওয়া বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে
পারে।
চিকিৎসাঃ
ধর্মীয় অনুভূতি এবং ডায়াবেটিস জনিত জটিলতার
কথা বিবেচনায় রেখে রোগী নিজেই সিদ্ধান্ত নিবেন রোজা রাখবেন কিনা তবে জটিলতার ব্যাপারে
ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলোচনা অতীব জরুরি। রোজার কারণে যে সমস্ত
রোগী ঝুঁকিপূর্ণ তাদের বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো-
যারা খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণঃ
✬ রমজানের পূর্বে বিগত ৩ মাসের মধ্যে খুব বেশি হাইপোগস্নাইসেমিয়া
হয়েছিল।
✬ যাদের বার বার হাইপো গস্নাইসেমিয়া হয়।
✬ যারা হাইপোগস্নাইসেমিয়া বুঝতে পারে না।
✬ যাদের দীর্ঘদিন ঘরে অনিয়মিত ডায়াবেটিস।
✬ বিগত ৩ মাসের মধ্যে (রমজানের পূর্বে) যাদের কিটোএসিডোসিস হয়েছিল।
✬ যারা টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগী।
✬ যাদের অন্যান্য অসুস্থতার মাত্রা অধিক।
✬ যারা বিগত ৩ মাসের মধ্যে ডায়াবেবিস বাড়ার কারণে অজ্ঞান হয়েছিল।
✬ যারা অধিক পরিমাণে পরিশ্রম করে।
✬ গর্ভাবস্থা।
✬ যারা ডায়ালাইসিসের
রোগী।
বেশি ঝুঁকি পূর্ণঃ
✬ যাদের ডায়াবেটিস ৮.৩-১৬.৭ মিলিমোল/ লিটার এর মধ্যে এবং এইচবিএ, সি ৭. ৫-৯% এর মধ্যে।
✬ যাদের কিডনিতে সমস্যা (রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি) আছে।
✬ যাদের অর্ধাঙ্গ, পক্ষাঘাত অথবা এমআই, আইএইচডি
ইত্যাদি আছে।
✬ যারা একা থাকেন এবং ইনসুলিন নেয় বা গিস্নবেন ক্লামাইড/ গিস্নকাজাইড
ইত্যাদি ওষুধ সেবন করেন।
✬ যারা একা থাকেন।
✬ যাদের অন্যান্য জটিলতা আছে।
✬ যাদের বয়স বেশি ও স্বাস্থ্য খারাপ।
কম ঝুঁকিপূর্ণঃ
✬ যাদের খাদ্য নিয়ন্ত্রণেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
আছে অথবা মেটফরমিন বা পাইওগিস্নটাজন জাতীয় ওষুধে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে এবং শারীরিকভাবে
সুস্থ।
✬ রমজান মাসে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং ডায়াবেটিস জনিত জটিলতার
ব্যবস্থাপত্র রোগীভেদে বিভিন্নরকম।
✬ যে সব রোগী খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ তাদের রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা
দিনে ২/৩ বার করে পরিমাণ করতে হয়।
✬ পুষ্টিঃ ৫০-৬০% ডায়াবেটিসের রোগীর রমজান মাসে শরীরের ওজন অপরিবর্তিত
থাকে। ২০-২৫% রোগীর হয় ওজন বাড়ে না হয় ওজন কমে, মাঝে মাঝে
৩ কেজির বেশি ওজন কমে যায়।
সাধারণতঃ ইফতারির সময় জটিল শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাবার রোগীরা
বেশি খেয়ে থাকে, তা পরিত্যাগ করা উচিত। কারণ এইসব খাবার পরিপাক
হতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই জটিল শর্করা জাতীয় খাবার সেহেরীর সময় এবং অধিকতর সরল শর্করা
জাতীয় খাবার ইফতারিতে খাওয়াই ভাল। ইফতারি থেকে সেহরি পর্যন্ত সময়ে বেশি পরিমাণ পানি/পানি জাতীয়
খাবার খাওয়া উচিত। সেহরির খাবার শেষ সময়ের একটু পূর্বে খাওয়াই ভাল।
ব্যায়ামঃ
✬ সাধারণত কায়িক পরিশ্রম করা যায়। অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে
হাইপোগস্নাইসেমিয়ার ঝুকি বেড়ে যায়। তাই পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে বিকেল বেলা বিশ্রামে থাকা উচিত। তারাবির নামাজ ব্যয়ামাকের
বিকল্প হিসেবে কাজ করে। টাইপ-১ রোগী ডায়াবেটিস বেশি থাকাবস্থায় ব্যয়াম করলে ডায়াবেটিস
আরো বেড়ে যেতে পারে।
✬ টাইপ-২ রোগীর জন্যঃ যে সব রোগীর ডায়াবেটিস পরিমিত খাদ্য ও
নিয়মিত ব্যায়ামের নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আছে, তাদের রোজার নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা মেনে
চলা উচিত যা ডায়াবেটিক হাসপাতালে পাওয়া যায়। নিয়মিত ব্যায়াম ইফতারীর ২ ঘন্টা পর করা উচিত।
✬ গর্ভবতী ডায়াবেটিক মায়ের রোজার সময় নানা
জটিলতা দেখা দেয় তাই রোজা না খারাই ভাল। রোজার সময় পানি শূন্যতা, রক্তের আয়তন কমে গিয়ে হাইপো টেনশন হতে পারে। তাই প্রেসারের ওষুধগুলো
মাত্রা পুনঃনির্ধারন জরুরি, কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার রক্তে চর্বি থাক বা না থাক ডায়াবেটিস
রোগীর জন্য সর্বদা বর্জন করা উচিত।
আপনাদের সুখী জীবন আমাদের কাম্য। ধন্যবাদ।
It is crucial to speak your slot game necessities with everyone involved in the project. So, the whole slot machine development team can 코인카지노 transfer ahead with one objective without any misunderstandings. A wild image can substitute for all different symbols besides scatters and different special symbols. Players can substitute a wild image to get a successful combination.
ReplyDelete