ঘুম না হওয়া মানুষের একটি
বড় সমস্যা। অনেকেই
ঘুম হয়না বলে ঘুমের ওষুধ খান। কিন্তু এই ঘুমের ওষুধ এক নাগাড়ে খেতে খেতে এমন অবস্থা হয় তখন ওষুধেও
কোন কাজ হয় না। কারণ
শরীরে এটি সয়ে যায়।
যার চোখে ঘুম আসে না সেই বোঝে
ঘুম না আসার যন্ত্রণা। বিছানায়
শুয়ে শুয়ে ঘুমের জন্য আকুতি কতজনের। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৫-৭ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘুমটুকু ঘুমাতে পারে না
অনেকে।
নিদ্রাদেবীকে হটিয়ে দিয়ে
অনিদ্রা এসে জুড়ে বসে মহাভারতের দুর্ষোধনের মতো অপাঙক্তেয়ভাবে। ভাবতে অবাক লাগে, আমাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে অন্তত একজন অনিদ্রায়
ভোগেন। অনিদ্রার চিকিৎসা কী? আদৌ কি সম্ভব অনিদ্রা থেকে মুক্তি পাওয়া? গবেষকদের শেষ নেই এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণার। বর্তমান লেখাটিতে অনিদ্রা থেকে মুক্তি পাওয়ার
বেশ কিছু পরামর্শ দেয়া হলো।
পরামর্শগুলো মেনে চললে আপনার
চোখে নেমে আসতে পারে সুখকর এক চমৎকার ঘুম।
উত্তেজক কোনো কিছু পরিহার
করুনঃ
শারীরিক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ওষুধ বা মাদক পরিহার করলে আপনি তলিয়ে যেতে পারেন
ঘুমের অতল রাজ্যে। অনেকে
ঘুমাতে যাওয়ার আগে সিগারেট কিংবা কফি পান করেন। এ দুটোই ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। সিগারেটের নিকোটিন এবং কফির ক্যাফিন স্নায়ুর
উত্তেজনা ঘটিয়ে তাড়িয়ে দেয় ঘুমটাকে। একই কথা প্রযোজ্য চকোলেট এবং ব্যথানাশক ওষুধের ক্ষেত্রে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধগুলোও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। যারা চাইনিজ খাবারে অভ্যস্ত তাদেরও দেখা দেয়
অনিদ্রা। অনেকে
ঘুমাতে যাওয়ার আগে অরেঞ্জ স্কোয়াশ বা কমলালেবুর পানীয় পান করেন। কিন্তু এতে থাকে টারট্রাজিন নামক এক ধরনের
রঙ, যা অনিদ্রা ঘটায়। তাই সুখকর ঘুমের জন্য এসব কিছুই পরিহার করতে
হবে।
অ্যালকোহল ত্যাগ করুনঃ
কারো কারো ধারণা অ্যালকোহল ঘুমের জন্য বেশ সহায়ক। কিন্তু অতিরিক্ত অ্যালকোহল মস্তিষেক ঘুমের
ছন্দে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। অ্যালকোহল পানে একটানা ঘুম হয় না, বারবার ঘুম ভেঙে যায়। অনেক সময় ঘুম আসেই না। সুতরাং ভালো ঘুমের জন্য ত্যাগ করতে হবে অ্যালকোহলের মায়াটুকু।
দুধ পান করুনঃ
অনেকের অবশ্য
দুধ হজম হয় না। কিন্তু
যাদের দুধ পানে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটে না তারা ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস
দুধ পান করতে পারেন। দুধ, হরলিকস কিংবা ওভালটিনে থাকে ট্রিপটোফেন নামক
এমাইনো এসিড, যা মস্তিষেক গিয়ে সেরোটোনিন নামক রাসায়নিক
উপাদানে রূপান্তরিত হয় এবং আপনার ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।
ঘুমের ওষুধ খাবেন নাঃ
কেউ
কেউ ঘুমের জন্য নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খান। কিন্তু এটা চলতে থাকলে ওই ওষুধটার প্রতি নির্ভরতা চলে আসে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই চেষ্টা করুন ঘুমের ওষুধ বাদ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই
ঘুমাতে।
ক্ষোভ পুষে রাখবেন নাঃ
মনের মধ্যে ক্ষোভ, রাগ প্রভৃতি পুষে রাখলে তা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে। বিছানায় যাওয়ার আগেই আপনার ক্ষোভ দূর করুন। একা একা সুর দিয়ে গান গান। প্রশমিত করুন মনটাকে। কারো সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়লে সমঝোতায় আসুন তার সঙ্গে।
সালাদ খান বেশি করেঃ
আপনি
যদি নিয়মিত লেটুস খান আপনার ঘুমটা ভালো হবে। যদিও সালাদ ঘুমের জন্য বেশ সহায়ক-তবু এর মধ্যে
লেটুস নিদ্রা উদ্রেককারী হিসেবে কাজ করে। তাই আপনি যখন সালাদ খাবেন সালাদে লেটুস খেতে ভুলবেন না।
দূর করুন শারীরিক রোগঃ
ঘুম না আসাটা শুধু মানসিক কারণে কিংবা অন্যান্য কারণ নয়, শারীরিক কারণ এ ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক শারীরিক অসুখে ঘুম আসে না। আপনার ঘুম না এলে আপনি কোনো শারীরিক অসুস্থতায়
ভুগছেন কি না তা নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
বিছানায় রাখুন সুগন্ধিঃ
প্রাচীন লোকরা ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘরে ছিটিয়ে দিতেন সুগন্ধী। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু কিছু সুগন্ধি যেমন পুদিনা, কর্পুর, সাইপ্রাস,
লেবু, মেলিসা, গোলাপ,
চন্দন প্রভৃতি পত্রবিশেষ গুল্মের
সুগন্ধি নিদ্রা ডেকে আনে। তাই
আপনার বিছানায় এসব সুগন্ধি মেখে রাখতে পারেন।
গান শুনুন ধীরলয়েঃ
হার্ড
গানগুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় কিন্তু আপনি যদি লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে শরীরটাকে
শিথিল করে ধীরলয়ে গান শুনতে থাকেন দেখবেন এক সময় ঘুমের ঢল নেমে আসবে আপনার চোখে।
দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুনঃ
দুশ্চিন্তা অনিদ্রার অন্যতম কারণ। সব সময় চেষ্টা করুন দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে। অনেকে আবার দুশ্চিন্তা করেন ‘ঘুম আসছে না’ এই ভেবে। ঝেড়ে ফেলুন সব দুশ্চিন্তা। অবগাহন করুন ঘুমের গহিন সমুদ্রে।
আপনাদের সুখী জীবনই আমাদের কাম্য। ধন্যবাদ।
0 comments:
Post a Comment