মাথাব্যথার প্রকৃত কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আজও কোনও স্থির সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। টেনশনসহ নানা কারণেই মাথাব্যথা হতে পারে। এসব মাথা ব্যথাকে আমরা আধকপালি বা মাইগ্রেন বলি। এ নিস্তারের উপায় কি? সে বিষয়েই আজকের আলোচনা।
বিজ্ঞানীরা ১৯৬০ সালে মাথাধরা সম্পর্কিত এক গবেষণায় জানান, টেনশনের কারণে অনেক সময় মাথাব্যথা হয় এবং তার চিকিৎসাও সহজ। রক্তবাহী শিরাগুলো যখন মস্তিষ্কে ঠিকমতো রক্ত সরবরাহ করে না, তখন অনেকে একে মাইগ্রেনের ব্যথা হিসেবে চিহ্নিত করেন।
মাইগ্রেন হল একটি ভিন্ন ধরনের মাথা ব্যথা। মেয়েদের মাঝে এ রোগ বেশী দেখা যায়। তবে পুরুষেরও এ রোগ হতে পারে।
এই রোগ কেন হয়?
মাথার ভেতরের রক্তচলাচলের তারতম্যের কারণে এই রোগ হয়। রক্ত চলাচল কমে গেলে হঠাত্ করে চোখে সব অন্ধকার দেখা যায়, এবং পরবর্তীতে রক্ত চলাচল হঠাত্ বেড়ে গিয়ে প্রচন্ড মাথা ব্যথার অনুভূতি তৈরী হয়।
এছাড়াও ...
প্রথমতঃ কিছু কিছু খাবার যেমনঃ চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি খাবার, জন্ম বিরতীকরণ ওষুধ, দুঃচিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম ইত্যাদির কারণে এই রোগের সূচনা হতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ মাইগ্রেন রোগী যারা এ ব্যথার পাশাপাশি সাইনাসগুলোর প্রদাহে ভুগছেন বা প্রচণ্ড সর্দি-কাশি বা ঠাণ্ডায় ভুগছেন; তাদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের ব্যথার প্রকোপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
তৃতীয়তঃ যখন প্রচণ্ড গরম পড়ে এবং পরিবেশের অবস্থা ভ্যাপসা আকার ধারণ করে তখন মাইগ্রেনের রোগীর মাথাব্যথার প্রকোপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে শীতকালে যদি ঠাণ্ডা বাতাস বেশি লাগে বা কুয়াশা পরিবেষ্টিত অবস্থা বিরাজ করে তখন এর প্রকোপ আরও বেড়ে যায়।
কমন মাইগ্রেনঃ
মাথা ব্যথা, বমি ভাব এই রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে, অতিরিক্ত হাই-তোলা, কোন কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তবোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথা ব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে। মাথার যে কোন অংশ থেকে এই ব্যথা শুরু হয়। পরবর্তীতে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। চোখের পেছনে ব্যথার অনূভূতি তৈরী হতে পারে। চোখের উপর হালকা চাপ দিলে আরাম বোধ হয়। মাথার ২ পাশে কানের উপরে চাপ দিলে এবং মাথার চুল টানলে ভাল লাগে। তখন শব্দ এবং আলো ভাল লাগেনা। কখনো কখনো অতিরিক্ত শব্দ এবং আলোতে মাথা ব্যথা বেড়ে যায়।
ক্লাসিকাল মাইগ্রেনঃ
এখানে চোখে দৃষ্টি সমস্যা যেমন চোখে উজ্জ্বল আলোর অনুভূতি, হঠাত্ অন্ধকার হয়ে যাওয়া, দৃষ্টি সীমানা সরু হয়ে আসা অথবা যে কোন এক পাশ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। ২০ মিনিট স্থায়ী এই উপসর্গের পর বমির ভাব এবং মাথা ব্যথা শুরু হয় যা সাধারণত এক পাশে হয়। দৃষ্টির সমস্যা ১ ঘন্টার বেশী স্থায়ী হলে ধরে নিতে হবে এটি মাইগ্রেন নয়। ব্রেইন অথবা চোখে অন্য কোন সমস্যার কারণে দৃষ্টির এ সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মাথা ব্যথা বিহীন শুধুমাত্র ভিসুয়াল অরা বা দৃষ্টি সমস্যাও ক্লাসিকাল মাইগ্রেন এর লক্ষণ হতে পারে।
করণীয়ঃ
যাদের এ রোগ আছে, তাদের অন্তত: দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুম আবশ্যক। সে সব খাবার খেলে মাইগ্রেন শুরু হতে পারে সে সব খাবার যেমন কফি, চকলেট, পনির, আইসক্রীম, মদ ইত্যাদি বর্জন করা উচিত। অধিক সময় উপবাস থাকা যাবে না। জন্মবিরতীকরন পিল সেবন না করা শ্রেয়। প্রয়োজনে অন্য পদ্ধতি বেছে নেয়া ভাল। পরিশ্রম, মানষিক চাপ এবং দীর্ঘ ভ্রমণ বর্জনের মাধ্যমে মাইগ্রেনের আক্রমণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
চিকিত্সাঃ
এই ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খুব কার্যকর।
সবচেয়ে বড় কথা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানষিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এর মাধমে অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগের বার বার আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন, সব মাথা ব্যথা মাইগ্রেন নয়, দৃষ্টি স্বল্পতা, ব্রেইনটিউমার, মাথায় রক্তক্ষরণ ইত্যাদি কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে, সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন।
আপনাদের সুখী জীবনই আমাদের কাম্য। ধন্যবাদ।
0 comments:
Post a Comment