Sunday, November 24, 2013

ওজন নিয়ন্ত্রণ খুব একটা কঠিন কাজ নয়!

সারা বিশ্বে এখন স্লিম ফিগারের জয়জয়কার। মেদবিহীন ছিপছিপে আকর্ষণীয় দেহের গড়ন সবার প্রিয়। এই প্রত্যাশা পূরণ খুব একটা কঠিন কাজ নয়। পরিমিত সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে স্বাভাবিক ওজন আর সুস্থ শরীরের অধিকারী হওয়া সহজেই সম্ভব। সবার মুখেই এক কথা কীভাবে যে দেহের ওজন কমবে বুঝতে পারছি না বা এত চেষ্টা করেও ওজন কমাতে পারছি না। 


আসুন না দেখি একটু সচেতন হয়ে, তিনটি কৌশলের মাধ্যমে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ওজনের সাফল্যে পৌঁছাতে পারি কি না?
১. খাদ্য
২. ব্যায়াম ও
৩. ওজন নিরীক্ষণ ও রেকর্ডের মাধ্যমে

ওজনাধিক্য কী?
শরীরের ওজন স্বাভাবিক মাত্রা থেকে বেড়ে যাওয়াকে ওজনাধিক্য বলে। ওজনাধিক্য বা স্থূলতা তখনই বলা হবে যখন শরীরে চর্বির পমিরাণ বেড়ে যাবে। মানুষের শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় সঞ্চিত চর্বি (মোট ওজনের শতকরা প্রায় ১৪ ভাগ) থাকে। সব ক্ষেত্রে দেহের ওজন বেশি হলেই স্থূলতা বলা যায় না। যেমন একজন খেলোয়াড়ের দেহের ওজন বেশি থাকতে পারে তার শরীরে সুশৃঙ্খলভাবে বর্ধিত মাংসপেশির জন্য, যা হয়তো ওজন নির্ধারণের ফর্মুলায় ফেললে ওজনাধিক্যের মধ্যে হতে পারে। যাকে কখনোই স্থূলতা বলা যাবে না। সে জন্য দেহের জমাট বাঁধা চর্বির পরিমাপের মাধ্যমে ওজনাধিক্য বা স্থূলতা নির্ণয় করা শ্রেয়।

ওজনাধিক্য হয় কীভাবে?
ওজনাধিক্য হওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে শরীরের প্রয়োজন থেকে বেশি খাবার খাওয়া অর্থাৎ বেশি ক্যালরির খাবার খাওয়া। শরীরের প্রয়োজন মেটানোর পর বাড়তি খাবারগুলো চর্বি হয়ে দেহকোষে জমা হয়। কিছু চর্বি শরীরে জমা থাকা দরকার প্রয়োজনে শক্তি সরবরাহ করার জন্য। কিন্তু চর্বি বেশি জমা হলেই ওজনাধিক্য তৈরি হবে।

ওজনাধিক্যের সঙ্গে খাদ্যের সম্পর্ক:
ওজনাধিক্যের সঙ্গে খাদ্যের সরাসরি সম্পর্ক। অন্য কোনো কারণ যদি থাকেও তবুও ওজন বেড়ে যায় এ জন্যই যে, খাবার যদি বেশি খাওয়া হয় যা দরকার তার থেকে-শরীরের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন এটা যেমন সত্য আবার অন্যদিকে প্রয়োজন থেকে বেশি খাবার ক্রমাগতভাবে খাওয়া হলে ধীরে ধীরে ওজন বাড়তে থাকবে বলে ওজনাধিক্য সৃষ্টি হবে এটাও সত্য।

প্রয়োজন থেকে বেশি খেলে কীভাবে ওজন বাড়ে?
প্রতিদিন যদি ১০০ ক্যালরি খাবার বেশি খাওয়া হয় আর যদি তা খরচ না হয় তবে মাসের শেষে ৩০০০ ক্যালরি বেশি খাওয়া হবে যা খরচ না হয়ে যদি শরীরে সঞ্চিত চর্বি হয়ে জমা থাকে তবে এর ফলে মাসে ০.৪ কেজি ওজন বাড়তে পারে। (১ কেজি সঞ্চিত চর্বিতে ৭০০০ ক্যালরি থাকে) এভাবে প্রতিদিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ না হওয়া মাত্র ১০০ ক্যালরির খাবার সারা বছর ধরে যদি খাওয়া হয় তবে বছরের শেষে শরীরের ওজন ৪ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত বাড়বে।

১০০ ক্যালরি কীভাবে পাওয়া যায়?
একটি আটার রুটি বা একটি লুচি বা আধা পরোটা বা একটি মাঝারি মাপের কলা বা দুই টুকরা মাছ/মাংস বা দুই চা চামচ মাখন/ মেয়োনেজ বা ১০ পিস পটেটো চিপস বা আধা বোতল কোমল পানীয়।

হেঁটে কতটুকু ক্যালরি কমানো যায়?
লক্ষণীয় যে ১০০ ক্যালরি আছে এ রকম খাবার খাওয়ার সময় পরিমাণ বেশি হচ্ছে বলে মনে হবে না, কিন্তু সেগুলো কায়িক শ্রমের মাধ্যমে খরচ করা না হলে ধীরে ধীরে ওজন বেড়ে যেতে থাকবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ৬০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক গতিতে ১০ মিনিট হাঁটেন, তবে প্রায় ৪৭ ক্যালরি খরচ হবে অর্থাৎ ১০০ ক্যালরি খরচ করতে হলে ওই ব্যক্তিকে প্রায় ২০ মিনিট স্বাভাবিক গতিতে হাঁটতে হবে।

খাবারের ক্যালরি কমানোর উপায়:
= ডিমঃ ভাজি বা ওমলেট না খেয়ে সিদ্ধ বা পানি পোচ করে খাওয়া।
= দুধঃ ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে ওপরের সর তুলে ফেলে দিয়ে খাওয়া বা ফ্যাটবিহীন দুধ খাওয়া।
= মাছঃ তেলে ভাজি না খেয়ে সামান্য তেলে রান্না করে খাওয়া। মাংস কাটার সময় লেগে থাকা চর্বি খুঁটিয়ে বাদ দেয়া, মাংস রান্না করার পর ভেসে থাকা তেল ওপর থেকে তুলে ফেলে দেয়া।
= ডালঃ পিঁয়াজু বা ভুনা না খেয়ে সিদ্ধ করে খাওয়া।
= চালঃ পোলাও বা ফ্রাইড রাইস না খেয়ে ভাত খাওয়া।
= আটাঃ পরোটা, লুচি, পুরি ইত্যাদি না খেয়ে রুটি, পাউরুটি অথবা তন্দুর খাওয়া। রুটিতে মাখন বা মার্জারিন বা মেয়োনেজ ব্যবহার না করা।
= শাক-সবজিঃ ভাজি না খেয়ে অল্প তেলে রান্না করে খাওয়া, সিদ্ধ বা স্যুপ বানিয়ে খাওয়া।
= সালাদঃ সালাদ ড্রেসিং (মেয়োনেজ, সালাদ ওয়েল ইত্যাদি) না মিশিয়ে মসলার গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়া।
= ফলঃ কাস্টার্ড বা জুস না খেয়ে টাটকা ফল খাওয়া।
= খাবার রান্নার সময় কম মসলা ব্যবহার করা (মসলা বেশি ব্যবহার করলে তেল বেশি ব্যবহার করা হয়ে যায়), রান্নায় তেল, ঘি, ডালডা ইত্যাদি কম দেয়া।
= খাবারে নারকেল, বাদাম, দই, ক্রিম ইত্যাদির ব্যবহার বাদ দেয়া।
= ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বাদ দেয়া।
= চিনি ও চিনি দিয়ে বানানো খাবার বাদ দেয়া।

ওজন কমানোর জন্য করণীয়:
ওজন কমানোর জন্য হয় কম ক্যালরির খাবার খেতে হবে নয়তো কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে (বা ব্যায়াম) ক্যালরি খরচ করে ফেলতে হবে, বরং দুটোই একসঙ্গে করা আরো ভালো। শুধু কায়িক পরিশ্রম কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ওজন কমায় না, কার্যকর হয় তখনই যখন সঙ্গে যুক্ত হয় কম ক্যালরির খাবার খাওয়া।

মানিয়ে চলার কয়েকটি কৌশল:
= ধৈর্য ধরে দৃঢ়তার সঙ্গে অন্য অনেক কাজের মতো খাওয়াকে কাজ হিসেবে নেয়া।
= কোনো বেলায় খাবার বাদ দেয়া ঠিক নয়, এতে বেশি ক্ষুধা তৈরি হবে, পরবর্তী সময়ে বেশি খেতে ইচ্ছা করবে এবং অল্প দিনের মধ্যে খাদ্য নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা কমে যাবে।
= খাবার পরিমাণে ঠিক রেখে সুষম খাবার খাওয়াঃ ক্যালরিবহুল খাবার খাওয়া কমানো এবং কম ক্যালরির খাবার খাওয়া বাড়ানো।
= ধীরে ধীরে ভালো করে খাবার চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করাঃ এতে করে অল্পতে পেট ভরে গেছে বলে মনে হবে এবং বারেবারে খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাবে।
= ঝোঁকের বশে খাবার খাওয়া বাদ দেয়া যেমনঃ মার্কেটে বা বাইরে গেলে খাওয়ার ইচ্ছা সম্বরণ করতে হবে। ফাস্টফুড বা আইসক্রিম জাতীয় ক্যালরিবহুল খাবার বাদ দিতে হবে।

সর্বোপরি দৈহিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম অব্যাহত রাখা। বাঞ্ছিত ওজনে ফিরে না আসা পর্যন্ত চেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং বাঞ্ছিত ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করে যাওয়া। ওজন যেমন একদিনে বাড়ে না তেমনি ওজন কমানোও একদিনে সম্ভব নয়। তাই ধীরে ধীরে চেষ্টার মাধ্যমে ওজন কমানো সম্ভব। আজকের পরামর্শগুলো ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

আপনাদের সুখী জীবনই আমাদের কাম্য। ধন্যবাদ।

0 comments:

Post a Comment