Sunday, December 8, 2013

সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া (Leucorrhoea) এর কারণ ও প্রতিকারঃ

লিউকোরিয়া হচ্ছে সাদা স্রাব। নারীর যোনি থেকে ক্রমাগত সাদা তরলের ক্ষরণ হলে তাকে লিউকোরিয়া বলা হয়। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলের নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায় বেশি।



স্ত্রীলোকের যৌনাঙ্গ (জরায়ুর মুখ ও যোনিপথ) থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় কখনও পিচ্ছিল বা শুধু সাদা স্রাব নির্গত যা যোনিপথকে ভেজা ও পিচ্ছিল রাখে। অল্প পরিমানে সাদা স্রাব কিন্তু স্বাভাবিক। কিন্তু এ সাদা স্রাব যদি পরিমাণে বেশি ও তার সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ যেমনঃ- দুর্গন্ধ, দুধের মতো সাদা, ছানার মতো, শুধু পানির মতো শ্লেষ্মা, রক্ত ও পুঁজ, কখনও দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ ও চুলকানি, জ্বালা-যন্ত্রণা থাকে তখনই মনে রাখতে হবে যে নিশ্চয়ই এর কোন কারণ রয়েছে।

স্বাভাবিক সাদা স্রাব কোন কোন সময় দেখা যায়ঃ-

• মাসিকের আগে ও পরে।
• ওভুলেশনের সময়।
• মিলন অবস্থায় বা তার পরে।
• গর্ভাবস্থায়।
• যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খান।
• প্রসবের পরে।
• জন্মের ১-১১ দিনের মধ্যে সদ্যজাত শিশুর সাদা স্রাব তার সঙ্গে খুব সামান্য একটু রক্তের লাইন দেখা দিতে পারে হরমোনের কারণে।
• মাসিক বন্ধ হওয়ার পর (মেনোপজ হলে)।

অস্বাভাবিক সাদা স্রাবের কারণগুলো কী কী?

• যোনিপথে প্রদাহ, যাকে ভ্যাজাইনাইটিস বলে।
• ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনাইটিস।
• ক্যানডিডিয়াসিস বা মনিলিয়ান ভ্যাজাইনাইটিস।
• মেনোপজাল ভ্যাজাইনাইটিস।
• অস্বাস্থ্যকর অবস্থা, কেমিক্যাল ইরিটেন্ট (সাবান, স্যাভলন, ডেটল, অয়েন্টমেন্ট) টাইট আন্ডারওয়্যার, মাস্টারবেশন ইত্যাদি।
• ভ্যালভ্যাল আলসার।
• গনোরিয়া।
• ক্যামাইডিয়া দ্বারা ইনফেকশন হলে।
• আইইউসিডি পরা থাকলে। (২%)
• সারভিসাইটিস।
• সারভাইক্যাল ইরোসন। (২০%)
• কোষ্ঠকাঠিন্য হলে।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ও খুব রোগা মেয়েদের, কোন সিস্টেমিক ডিজিজ হলে যেমনঃ- অ্যানেমিয়া, ডায়াবেটিস, ম্যালাইটাস, ক্রিমি, কলাইটিস ইত্যাদি।
• মেনোপজের পর।
• মানসিক রোগ যেমন_ দুশ্চিন্তা,অবসাদ, মানসিক অশান্তি ইত্যাদি।
• যারা অনেক বেশি সময় একটানা দাঁড়িয়ে কাজ করেন।
• পুকুরে গোসল করার সময় অপ্রত্যাশিত ভাবে যোনিপথে পানি ঢুকে গেলে।
• জেনিটাল প্রলাপস হলে। (১০%)
• ক্রনিক পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ থাকলে। (২%)
• কৃমি-সুতা কৃমি, ক্রনিক অ্যামিবিয়াসিস থাকলে।
• কোন কারণ ছাড়া (৬%)

যা করতে হবেঃ

• দেরি না করে লজ্জাকে প্রতিহত করে আপনার সমস্যা সমাধানে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।
• পোশাক পরিধানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সিলেকশনে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
• সুতির প্যান্টি ব্যবহার করতে হবে।
• প্রচুর (১০-১২ গ্লাস) পানি প্রতিদিন পান করুন।
• পুষ্টিকর খাবার সঙ্গে ভিটামিনযুক্ত প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে।
• নিয়মিত ব্যায়াম করতে থাকুন।
• যোনিতে কোনো প্রকার সেপ্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। 
• জন্ম নিরোধক পিল সেবনের পূর্বে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সর্ম্পকে জেনে নিতে হবে।
• মানসিক দুশ্চিন্তা, অবসাদ দূর করতে হবে ও ঠিকমতো ঘুমাতে হবে।
• রোগ নির্ণয়ে ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন।
• অন্যান্য উপসর্গ ও লক্ষণ থাকলেও তা ডাক্তারকে নির্ভয়ে বলুন।

যে কোন ভ্যাজাইনাইটিস হোক না কেন সাবান, ডেটল, স্যাভলন ইত্যাদি অবশ্যই ব্যবহার করবেন না। 
মৃদু গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে ব্যবহার করবেন। 


আপনাদের সুখী জীবনই আমাদের কাম্য।

0 comments:

Post a Comment