সারাদিনের সিয়াম সাধনার পরে আহারে এক আধটু ভালোমন্দ সকলেই খেতে
চাই। রসনা বিলাসের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে
থাকে এসিডিটি, বুক
জ্বালা। আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় সেইসব খাবার
নিয়ে যেগুলো বুক জ্বালা বৃদ্ধি ও হ্রাসে সহায়ক।
✬ সারাদিনের অনাহারের পরে এমনিতেই পেটে থাকেনা কোন খাবার। ভাজাপোড়া খাবার বাড়িয়ে দিবে এসিডিটির পরিমাণ। ভাজাপোড়া খাবারে রয়েছে অতিরিক্ত তেল বা চর্বি। চর্বি যুক্ত খাবার হজম হতে সময় নেয় বেশি, পাকস্থলিতে থাকে অধিক সময়, তাই এসিডের কাজ ও চলে বেশিক্ষন ধরে। যার ফলাফল বুক জ্বালা করা।
✬ সাইট্রাস বা লেবু জাতীয় ফলের বিশেষ দুর্নাম রয়েছে বুকজ্বালার
পেছনে। খালি পেটে সরাসরি টক কিছু খুব একটা বেশি
খাওয়া ঠিক হবে না। লেবুতে রয়েছে এসিড যা পাকস্থলির এসিডের
সাথে মিলে এসিডিটির কস্ট বাড়িয়ে দেবে।
✬ বাঙালীরা এমনিতেই মশলা যুক্ত খাবার পছন্দ করি। এসিডিটির হাত থেকে বাঁচতে না হয় পেয়াজ, রসুন, মরিচ বা গোল মরিচ একটু কমই খাই। এসব মশলা বুক জ্বালা বাড়ানোর মহৌষধ!
✬ টমেটোকে হয়তো বেশীরভাগ মানুষই নিরাপদ বলে মনে করবো কিন্তু
দেখা গেছে টমেটো সস বা অধিক টমেটো সহকারে রান্না খাবারে বুক জ্বালা বাড়তে পারে।
✬ আমিষের মাঝে অল্প চর্বি যুক্ত খাবারই উত্তম। মাছ খেতে পারেন ইচ্ছামতো। মুরগী বেছে নিতে পারেন। সমস্যা
সেই গরু-খাসিতে। এগুলোর ব্যাপারে সতর্ক হোন।
✬ মিস্টি পছন্দ?
চকোলেট
খেতে ভালবাসেন? সতর্ক হতে
হবে এর ব্যাপারে। চকোলেটেরও রয়েছে বদনাম এসিডিটির পেছনে।
✬ খেতে হবে কম করে। একবারে
বেশি করে খেলে এসিডিটির প্রকোপ বাড়ে। রাতে
ঘুমাতে যাবার বেশ কয়েক ঘন্টা আগেই সেরে ফেলুন নৈশভোজ। না হলে ঘুমের মাঝে বুক জ্বালা করতে পারে।
✬ কফি; শক্তি
জোগাতে যার জুড়ি নেই। সাবধান
থাকতে হবে কফির ক্ষেত্রেও। দিনে এক
বা দুকাপ কফিতে মানা নেই তবে এর বেশি পান করলে এসিডিটি আপনাকে নাও ছাড়তে পারে।
✬ কার্বোনেটেড বেভারেজ বা কোল্ড ড্রিঙ্ক, খুবই খারাপ পানীয়। বুক জ্বালাপোড়া করার পেছনে অতিরিক্ত কোল্ড ড্রিঙ্কস পানের
অবদান অনেক।
✬ খুব কম বাংলাদেশিই মদ পান করেন। যারা করে থাকেন তারা মনে রাখবেন মদ পানে এসিডিটি বাড়ে।
জেনে নেবো এসিডিটির হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় বন্ধু
খাবারের নামঃ
✬ সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন চিড়া, দই, ওটমিল। ফল খেতে
পারেন পাকা কলা, ফুটি বা
বাঙ্গি। চিড়া, মুড়ি এগুলোরও রয়েছে এসিড শুষে নেওয়ার ভালো ক্ষমতা।
✬ তেল, ভাজি
পোড়া যত পারুন কম খান। বাইরের
সুস্বাদু খাবার দেখলেই খেতে চাওয়ার ইচ্ছা সামলাতে হবে।
✬ আমিষের মাঝে ডিম বা মাছে কোন সমস্যা নেই। মুরগী নিয়েও কোন আপত্তি করেন না ডাক্তাররা। গরু-খাসী খেতে হলে যথাসম্ভব তেল বাদ দিয়ে রান্না করতে হবে।
✬ সালাদ যদি হয় টমেটো বা পিয়াজ ছাড়া তবে খেতে পারেন যত খুশি।
✬ ভেষজ উদ্ভিদ ঘৃতকুমারী আমাদের খুব পরিচিত একটি নাম। ঘৃতকুমারীর শরবতের সুনাম রয়েছে বুকের জ্বালা পোড়া কমাতে।
✬ পানীয়ের মাঝে নিতে পারেন লেবু বা কমলা ছাড়া আপেল জুস, ম্যাঙ্গো জুস, বেরি জুস। কোল্ড ড্রিঙ্কস বাদ দিয়ে পান করুন পানি বা হারবাল চা।
✬ ফুলকপি, পাতাকপি, আলু, ব্রুকলি,
শালগম, লাউ, কুমড়া, সবুজ
বিভিন্ন শাক প্রভৃতি সবুজ সবজি খেতে পারেন নির্দ্বিধায়।
✬ দুধে সমস্যা না থাকলেও দুগ্ধজাত মাখন, ঘি নিয়ে ঝামেলা আছে। মাখন, ঘি, পনির খেলে হিসাব রেখে খাবেন।
খুব সাধারণ প্রতিদিনের সমস্যা এই এসিডিটি বা বুক জ্বালা। খাবার গ্রহনে একটু সচেতন হলেই আমরা পারি অনেকটা মুক্ত থাকতে এই
সমস্যা থেকে। নিজেকেই খেয়াল করতে হবে কোন বিশেষ
খাবারে বুক জ্বালা বাড়ছে, সেসব
খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। যখন তখন
এন্টাসিড চোষার প্রয়োজন ও তেমন একটা পড়বে না আর।
[আপনাদের সুখী জীবন আমাদের কাম্য। ধন্যবাদ।]
0 comments:
Post a Comment