Saturday, July 5, 2014

Sinusitis/ সাইনুসাইটিস!

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সুন্দর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন তথা নাককান ও গলায় এ তিন অঙ্গ মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর কোনো একটি রোগাক্রান্ত হলে সম্পূর্ণ মানবদেহই অসুস্থ হয়ে যায়। এ তিন অঙ্গের যেকোনো একটি অথবা একত্রে তিনটিই রোগাক্রান্ত হতে পারে। যখন কোনো মানুষের রক্তের Esonophil, Serum IGE-এর পরিমাণ বাড়তে থাকেতখন এমনিতেই ঠাণ্ডাহাঁচিসর্দি লেগে যায়। একপর্যায়ে নাকের ভেতরের মাংস ও টনসিল বৃদ্ধি হয় এবং সব শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিতে অ্যালার্জিক প্রদাহ সৃষ্টি হয়। মুখমন্ডল ও মস্তিস্কের হাড়কে হাল্কা করার সুবিধার্তে এর ভেতরে কিছু বায়ুকুঠুরি আছে যার নাম সাইনাস (Sinus), আর ঠাণ্ডায় এর প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন এর জন্য যেই রোগটি হয় তাই আমাদের অতিপরিচিত সাইনুসাইটিস (Sinusitis)



সাইনাস সাধারণত চার প্রকারঃ
১। Maxillary
২। Frontal
৩। Ithomoidal
৪। Sphenoidal

সাধারণত Maxillary ও  Frontal সাইনাসে ইনফেকশন হয়ে থাকে। মাথার খুলির মধ্যে যে Sinus থাকেসেগুলোর বিশেষ ধরনের কাজ রয়েছে। এসব সাইনাস মাথার মধ্যে অবস্থিত বাতাসকে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুতে কাজ করে মাথাকে হালকা রাখে ও খুলির অঙ্গকে যাবতীয় সমস্যা থেকে রক্ষা করে। 

সাইনোসাইটিস দুই ধরনেরঃ 
একটি তীব্র প্রদাহযুক্ত অন্যটি ক্রনিক দীর্ঘ দিনের প্রদাহ, যা সাধারণত আস্তে আস্তে হয়ে থাকে। সাইনোসাইটিস সাধারণত ঠাণ্ডা ও ভেজা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, ধুলোবালু ও ধোঁয়াযুক্ত পরিবেশে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়াও নাকে আঘাত পাওয়াএলার্জিনাকের হাড় বাকা হয়ে যাওয়ানাকে টিউমার হওয়া, নাকের ইনফেকশননাকের ভেতর ঝিল্লির প্রদাহ ও নাকের ভেতর মাংস বৃদ্ধি এবং ব্যাকটেরিয়া জনিত নানাবিধ কারণে গুলো এ রোগের প্রকোপ অনেকগুনে বাড়িয়ে তোলে

উপসর্গঃ 
সাধারণত চোখের নিচ ও কপাল সহ মাথাব্যথামুখমণ্ডলমাথার পেছন দিকে ব্যথাসর্দিহাঁচিনাকে ব্যথা হওয়া এবং আস্তে আস্তে শ্বাসকষ্ট অনুভব হলেই সাইনোসাইটিসের লক্ষণ বুঝতে হবে। নাক দিয়ে অবিরত পানি পরা বা হটাৎ করে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়াটা সাইনুসাইটিস রোগের একদমই পরিচিত একটি উপসর্গ। সেই সাথে তীব্র-দীর্ঘ ও বিরক্তিকর মাথা ব্যথা তো রয়েছেইসাইনাস গুলোর ঠিক উপরেও একটা চাপা ব্যথা থাকে। মাথা ভারী ভারী লাগা ও সবকিছু খাবারের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া। অনেক সময় এর সাথে জরগা ম্যাজ ম্যাজ করা এবং মানসিক অবসাদ যোগ হয়ে রোগীকে ভীত করে তোলে। এ ক্ষেত্রে প্যাথলজিতে পিএনএস এক্স-রে করে আমরা সাইনাসের অবস্থান জানতে পারি। 

সাইনোসাইটিসের চিকিৎসাঃ 
সাধারণত বেশির ভাগ রোগীকেই দেখা যায় যারা সাইনাসে ভোগেন তাদের নাকের ভেতর মাংস বৃদ্ধি হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রথমে পলিপের চিকিৎসা দিয়ে নাকের দুটি ছিদ্র ব্লক অবস্থা থেকে মুক্ত করে সাইনোসাইটিসের চিকিৎসা শুরু করা ভালো। এতে ভালো ফল আশা করা যায়। 

সাধারণত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় সাইনোসাইটিসের তীব্র কষ্টকর পরিস্থিতি থেকে অতি অল্প সময়ে মধ্যে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

অন্য পদ্ধতিতে অপারেশন ও সিরিঞ্জ দিয়ে পানি ঢুকিয়ে ওয়াশের মাধ্যমে সাইনোসাইটিসের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় বছরে কমপক্ষে দুইবার এ ধরনের চিকিৎসা নিতে হয়। এটি রোগীর জন্য দীর্ঘ সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ চিকিৎসা।


রোগীদের করণীয়ঃ 
চিকিৎসার পাশাপাশি ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার ব্যবহার, অতিরিক্ত গরম, ধুলোবালু, অ্যালার্জি-জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।

অনেকের এই রোগটি বছরে কয়েকবার হয়ে থাকেবিশেষ করে যারা বিভিন্ন এলার্জিতে ভোগেনতাই এ রোগ এড়াতে ঐসব ব্যাপারে বিশেষ সাবধান হওয়া আবশ্যক। শুষ্কখোলামেলা এবং যথেষ্ট আলো বাতাস আছে এমন ঘরে বসবাস সাইনুসাইটিসের সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস করে। সেই সাথে নাকে বাষ্পের ভাপ নেয়াপুষ্টিকর ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়া এবং বিশ্রাম নেয়া এ রোগে বেশ আরাম দেয়


[আপনাদের সুখী জীবন আমাদের কাম্য। ধন্যবাদ।]

0 comments:

Post a Comment