Sunday, June 15, 2014

আসছে রমজানে কখন কি খাবেন?

আসছে সিয়াম সাধনার মাস রমজানরমজানে খাবারের নিয়ম-কানুন সব পাল্টে যায়কেউ কেউ ইফতারিতে এতো বেশী পরিমানে খাবার খায় যে সন্ধ্যারাতে বা সেহরীতে ঠিকমত খেতে পারে নাআসুন জেনে নেই কি রকম হতে পারে ইফতারিতে খাবার, সন্ধ্যারাতে খাবার ও সেহরীর খাবার



ইফতারির খাবারঃ
শরবত বা ডাবের পানি, কাঁচা ছোলা, কম তেলে ভাজা ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি অথবা আলুর চপ বা যেকোনো একটি তেলে ভাজা মুড়ি অথবা চিড়া এবং ফলযেদিন হালিম অথবা খিচুড়ি খাওয়া হবে সেদিন বেসনের বা ডালের তৈরি ভাজা খাবার এবং মুড়ি বা চিড়া বাদ দিতে পারেনআবার নুডলস অথবা ফ্রাইড রাইস খেলেও মুড়ি অথবা চিড়া বাদ দিতে হবেইফতারির কাঁচা ছোলার সঙ্গে আদা কুচি, লবণ ও পুদিনা পাতা কুচি দিয়ে খাওয়া যায়এটা হজমে যেমন সহায়ক, তেমনি ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি এতে দূর হবেরমজানের সময় ইফতারিতে খেজুর একটি বিশেষ উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছেপ্রতিদিন অন্যান্য খাবারের সঙ্গে একটি বা দুটির বেশি খেজুর খাওয়ার তেমন প্রয়োজন নেইকারণ, এতে ক্যালরি ও শকর্রার পরিমাণ বেশি থাকেযদিও পর্যাপ্ত লৌহ খেজুর থেকে পাওয়া সম্ভব

সন্ধ্যারাতের খাবারঃ
রোজার সময় সন্ধ্যারাতের খাবারের গুরুত্ব তেমন থাকে নাতারপরও কেউ যদি খেতে চান তাহলেযেহেতু ইফতারিতে ডালের তৈরি খাবার বেশি হয়, সেহেতু এ সময় ডাল বাদ দেওয়া যেতে পারেএ সময় হালকা মসলায় রান্না করা মাছ ও সবজি থাকলে ভালো হয়ইফতার ও সেহরীতে অনেক সময় সবজি খাওয়াটা বাদ পড়ে যায়অনেকেই রমজানে সবজি একেবারেই পছন্দ করেন নাতাঁদের জন্য সন্ধ্যারাতেই সবজি খাওয়ার উপযুক্ত সময়এ রাতে খাবারে ছোট মাছও রাখা যেতে পারেসেহেরীর সময় কাঁটা বেছে মাছ খেতে অনেকেই বিরক্ত বোধ করেন

সেহেরীর খাবারঃ
সেহেরীর খাবার গ্রহণ করার অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যগত দিক রয়েছেকারণ, যদি সেহেরীতে খাবার না খান তাহলে অবশ্যই দুর্বল হয়ে পড়বেনএতে ক্যালরির ঘাটতি দেখা দেবেফলে এক মাস রোজা রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবেসেহেরির সময় না খেলে আমাদের দেহের বিপাকক্রিয়ায় বেশ পরিবর্তন আসতে পারেএতে গ্লুকোজ ক্ষয় বেশি হয় বলে ক্লান্তি আসেসেহেরীতে ভাতই খেতে হবে এমন কোনো কথা নেইরুচি অনুযায়ী রুটি, পরাটা, দুধ, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারেএ সময় মাংস ও ডিম খাওয়া সুবিধাজনকএই সময়টাতে ঘন ডাল খাওয়া যেতে পারেএ ছাড়া ছোট-বড় সবার জন্যই এক কাপ দুধ খাওয়া উচিতকারণ, খাবারে চাহিদামতো প্রোটিন বা আমিষ না থাকলে উপবাসের সময় শক্তির ঘাটতি দেখা দেবে

মোট কথা অন্যান্য দিনে যার যতটুকু ক্যালরির চাহিদা থাকে, ততটুকু ক্যালরি রমজানের তিন বেলা আহারে গ্রহণ করতে হবেএর বেশিও নয়, আবার কমও নয়রোজার সময় প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই মেন্যু ঠিক করা উচিততবে আমার কথা এই যে কিছুদিন আগে পর্যন্তও দেখা যেত যে যেকোনো অসুস্থতায় অনেকেই রোজা রাখাকে আতঙ্কজনক বলে ভাবতেনবর্তমানে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের উপদেশ, আশ্বাস ও সহযোগিতার ফলে অসুস্থতা নিয়েও অনেকে নির্বিঘ্নে রোজা রাখতে পারছেন

রোগীদের জন্য:
ডায়াবেটিস থাকলে চিনি-মিষ্টি-গুড়-মধু শরবত কিংবা অন্যান্য খাবার থেকে মিষ্টি বাদ দিতে হবেপেপটিক আলসারের রোগী হলে ডুবো তেলে ভাজা এবং ঝাল খাবার বাদ দিতে হবেতাঁরা খেতে পারেন চিড়া, কলা, চিড়া-দই, মুগের ডালের নরম খিচুড়ি, নুডুলস ইত্যাদি

রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেশি থাকলে ইফতারিতে তেঁতুল ও রসুনের চাটনি খাওয়া যেতে পারেযদি কোনো কারণে ডাল খাওয়া নিয়েও সমস্যা থাকে, তাহলে ইফতারিতে চালের গুঁড়া বা ময়দার বড়া এবং চিড়া, দই, নুডুলস, ফ্রায়েড রাইস খাওয়া যেতে পারে

ওজন বেশি থাকলে তেলের পরিমাণ কমাতে হবে এবং সম্পূর্ণ খাবার থেকে ক্যালরি কমাতে হবেএদিকে যাদের ওজন কম তাদের জন্য ইফতারিই আদর্শ খাবার

সবশেষে বলা যায়, রমজান মাসে যে খাবারই গ্রহণ করুন না কেন, তা যেন সহজপাচ্য ও সীমিত হয়কারণ, এ সময় অতিরিক্ত খাবার দেহের রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে সূক্ষ্মভাবে পরিবর্তন আনে, ফলে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়এতে শারীরিক দুর্বলতা অনুভূত হয়অর্থাৎ বেশি খাবার খেয়েও কোনো লাভ হয় নাএমনভাবে খেতে হবে যাতে এক মাস রোজা রাখা সম্ভব হয়

[আপনাদের সুখী জীবন আমাদের কাম্যধন্যবাদ।]

0 comments:

Post a Comment