Sunday, November 10, 2013

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়!

কেউ যদি প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও, তখনই একে বলব কোষ্ঠকাঠিন্য


কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণঃ
১. আঁশজাতীয় খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূল কম খেলে;
২. পানি কম খেলে;
৩. দুশ্চিন্তা করলে;
৪. কায়িক পরিশ্রম, হাঁটা-চলা কিংবা ব্যায়াম একেবারেই না করলে;
৫. অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে;
৬. ডায়াবেটিস হলে;
৭. মস্তিষ্কে টিউমার হলে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে;
৮. অনেক দিন বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকলে;
৯. বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন, যেমনঃ
ক. ব্যথার ওষুধ;
খ. উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ;
গ. গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ;
ঘ. খিঁচুনির ওষুধ এবং
ঙ. যেসব ওষুধের মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামজাতীয় খনিজ পদার্থ থাকেতা ছাড়া স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার জন্যও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারেএর মধ্যে কাঁপুনিজনিত অসুখ, স্নায়ু রজ্জু আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ও থাইরয়েডের সমস্যা উল্লেখযোগ্য

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণঃ
১. শক্ত পায়খানা হওয়া;
২. পায়খানা করতে অধিক সময় লাগা;
৩. পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া;
৪. অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরও পূর্ণতা না আসা;
৫. মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথার অনুভব করা এবং
৬. আঙুল কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে পায়খানা বের করা

৭. পেট ফুলে থাকা, স্ফীতি কিংবা তলপেটে বা উদরে অস্বস্তি বোধ হওয়া।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়ঃ
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে;
২. প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন, এবং দিনে নুন্যতম আট গ্লাস জল পান করুন।
৩. দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে;
৪. যারা সারাদিন বসে কাজ করেন তাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং
৫. যেসব রোগের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তার চিকিৎসা করতে হবে
৪. মল ত্যাগের জন্যে যথেষ্ট সময় দিন, বিশেষত সকালের নাস্তার পর এবং রাতের আহারের পর, এবং যদি পারেন তবে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মল ত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কখন ডাক্তার দেখাবেনঃ
হঠাৎ দু একবার কোষ্ঠকাঠিন্য হলেই যে আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এমন নয়, কিন্তু যদি এই সমস্যায় আপনাকে ক্রমাগত দুই সপ্তাহ কিংবা তারও বেশি সময় ধরে ভুগতে হয় সেক্ষেত্রে অনতিবিলম্বে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করুনঃ-

১. যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে সাথে আপনার অল্প জ্বর, এবং তলপেটে ব্যথা থাকে, এবং যদি মল খুবই পাতলা এবং হালকা হয় সেক্ষেত্রে এগুলো হয়তো ডাইভার্টিকিউলিটিস রোগের লক্ষণ।
২. যদি আপনার মলের সাথে রক্ত বের হয়। এটা হয়তো পায়ুগত চিড়ের বা ক্ষতের লক্ষণ কিংবা অর্শরোগের লক্ষণ, আবার হতে পারে এটা মলনালীর ক্যান্সারের লক্ষণ।
৩. যদি ডাক্তারের পরামর্শে কোন ওষুধ সেবনের কারণে  বা ভিটামিন এবং মিনারেল সাপ্লিমেন্ট নেয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সূচনা হয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে হয়তো ওই ওষধ সেবন বাদ দিতে হবে, নতুবা সেবনের মাত্রা পরিবর্তন করতে হবে।
৪. যদি আপনি বয়স্ক হন কিংবা আপনার কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে এবং আপনি এক সপ্তাহ ধরে কিংবা তারও বেশি সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত সেক্ষেত্রে আপনার হয়তো মল শক্ত হয়ে উঠেছে।
৫. যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে আপনার ওজনও কমে যায়।

৬. যদি দুই সপ্তাহ যাবৎ সুষম খাদ্য এবং আশযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করেও এবং শরীর চর্চা করেও আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি না পেয়ে থাকেন। 


কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসা না করা হলে যে সমস্যা হতে পারেঃ
১. পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে;
২. পাইলস;
৩. এনালফিশার;
৪. রেকটাল প্রোলাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে;
৫. মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে;
৬. প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে;
৭. খাদ্যনালীতে প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যেতে পারে;
৮. খাদ্যনালীতে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে এবং
৯. কোষ্ঠকাঠিন্য যদি কোলন ক্যান্সার এবং মস্তিষ্কে টিউমারের জন্য হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তবে অকালমৃত্যু হতে পারে

কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেকে প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, সিরাপ এবং মলদ্বারের ভেতরে দেয়ার ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, যা মোটেও উচিত নয়। প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার ওষুধ ব্যবহার করলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়ফলে মলদ্বারে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা আর থাকে না। 

তাই বয়স্ক এবং যারা পরিশ্রমের কাজ করেন না, এদের মধ্যে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাদের উচিত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ নির্ণয় করে সে হিসেবে চিকিৎসা নেয়া। 

তবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ইসবগুলের ভূসি পানিতে ভিজিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেললে এবং গরু, খাশি ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার যেগুলো মল শক্ত করে তা থেকে দূরে থাকলে অনেকে উপকৃত হতে পারেন

আপনাদের সুখী জীবনই আমাদের কাম্য। ধন্যবাদ।

0 comments:

Post a Comment